সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় : বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলার সাঁইবাড়িতে ঐতিহাসিক গণহত্যাকাণ্ডের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে সাঁইবাড়ি কে কার্যত বয়কটই করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা কংগ্রেস নেতারা॥ তাঁরা সাঁইবাড়িতে নিহতদের পৃথকভাবে স্মরণ করলেন জেলা কংগ্রেস অফিসে । কেন সাঁইবাড়িতে নয় ? এই প্রশ্নের জবাবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি আভাস ভট্টাচার্য বলেন-- এখন সাঁইবাড়িতে শহীদ স্মরণের থেকে বেশী রাজনীতি হচ্ছে । সাঁইবাড়ি ঘিরে ক্ষোভ গোপন রাখেন নি জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সিনিয়ার নেতা কাশীনাথ গাঙ্গুলিও।
১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমান শহরের তেলমারুই রোডের প্রতাপেশ্বর শিবতলার সাঁই বাড়িতে উন্মত্ত জনতার হাতে খুন হন মলয় সাঁই ,প্রণব সাঁই ও গৃহশিক্ষক জিতেন রায়। ঘটনায় অভিযোগের আঙ্গুল ওঠে সিপিএমের দিকে । সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছিলেন সিপিএম নেতা বিনয় কোঙার ,প্রাক্তন মন্ত্রী নিরুপম সেন সহ ৮৬ জন ॥ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য গঠিত তারাপদ মুখোপাধ্যায় কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে খুন হন গুণমণি রায়। সাড়া জাগানো এই ঘটনার এবছর ৫০ বছর পূর্ণ হল । রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা কর্মসূচী থাকে । প্রতিবছর জেলার কংগ্রেস নেতারা সাঁইবাড়িতে নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানে গেলেও এবারে ছিল তার ব্যতিক্রম । ৫০ বছরে গোটা স্মরণ অনুষ্ঠানের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন রাজ্য তৃণমূল নেতারা। সকালে প্রতাপেশ্বর শিবতলায় যান মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ,বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাপতি শম্পা ধাড়া প্রমুখ । বিকেলে আসেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । নতুন শহীদ ফলকের আবরণ উন্মোচন হয়। ভিড় সামলাতে হিমসিম খায় পুলিশ। কিন্তু সাঁইবাড়ির ত্রিসীমানায় ছিলেন না সিপিএমের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে যাওয়া কংগ্রেস নেতারা । জেলা কংগ্রেস সভাপতি আভাস ভট্টাচার্য মঙ্গলবার বলেন ,এখন শহীদ স্মরণের বদলে সাঁইবাড়িতে রাজনীতি বেশী হচ্ছে । তাই আমরা বিড়ম্বনা বাড়াতে যাই নি। নিজেদের মত করে জেলা অফিসে শহীদ স্মরণ করেছি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাঁইবাড়ির ঘটনার তদন্তে যে অরুনাভ বসু কমিশন গঠন করেছেন তার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার দাবিও জানান আভাসবাবু।
জেলা কংগ্রেসের সিনিয়ার নেতা কাশীনাথ গাঙ্গুলি বলেন সাঁইবাড়ির শহীদদের প্রতি কংগ্রেস গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করে ।এখানে খোদ ইন্দিরা গান্ধী এসেছিলেন । প্রদীপ ভট্টাচার্য ,নুরুল ইসলাম,তুহিন সামন্তরা সাঁইবাড়িকে বুকে আগলে রেখেছিলেন । এমনকি দুর্গাপুরের শ্রমিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী সাঁই পরিবার ও জিতেন রায়ের উত্তরসূরীদের সম্মান জানান । তারপরেও এই পরিবারের কেউ কেউ কংগ্রেস সম্পর্কে খারাপ কথা বলছেন । আমরা এটা মানতে পারিনি, তাই এবছর যাই নি । কংগ্রেস নেতারা সাঁইবাড়িতে না যাওয়ার ফলে পঞ্চাশ বছরের শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান কিছুটা বিতর্কিত হয়ে গেল বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল ।